top of page

জাহিদ হাসান তাপস

Updated: Oct 10, 2022

ভরহীন কণা \'ভাইল ফার্মিয়ন\'-এর আবিষ্কারক জাহিদহাসান। আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছর আগে ১৯২৯ সালে বিজ্ঞানী হারম্যান ভাইল এই 'ভাইল ফার্মিয়ন' নামক অধরা কণার অস্তিত্বের কথা প্রথম জানিয়েছিলেন। তার নামেই এক কণার নামকরণকরা হয়েছিল। সেই ১৯২৯ সাল থেকেই বিশ্বের নামি-দামি সব পদার্থবিজ্ঞানী চেষ্টাচালিয়ে আসছিলেন 'ভাইল ফার্মিয়ন'-এর অস্তিত্ব প্রমাণের।

 
বিজ্ঞানী জাহিদ হাসান
বিজ্ঞানী জাহিদ হাসান

অবশেষে বহুবছর অর্থাৎ ঠিক ৮৫ বছরপর বাংলাদেশের এক কৃতিসন্তান অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান তাপস এই 'ভাইল ফার্মিয়ন' কণার অস্তিত্ত্ব আবিষ্কার করতে সম্ভব হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান তাপস দীর্ঘ সময় গবেষণা করে এই সফলতায় পৌঁছেছেন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু
সত্যেন্দ্রনাথ বসু

ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু 'বোসন' নামে একটি কণা আবিষ্কারের ৯১ বছর পরআরেক বাঙালি ড. জাহিদের নেতৃত্বে আবিষ্কৃত হলো নতুন গ্রুপের একটি কণা, যা আবিষ্কারেরপর কেবল তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞান পাল্টে যাবে না, ইলেকট্রনিক ও কম্পিউটার দুনিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। সম্প্রতি আমেরিকার বিজ্ঞান সাময়িকী 'সায়েন্স' পত্রিকায় ড. জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে গবেষক দলের এই সাফল্যের খবরও ভাইল ফার্মিয়ন কণার সন্ধান মেলার প্রামাণ্য তথ্য বিশদভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বনন্দিত পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান তাপসের পরিবারের সঙ্গে আবিষ্কৃত 'ভাইল ফার্মিয়ন কণা' সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে কথা হয়। বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান তাপস। তিনি শ্রীপুর আসন থেকে ছয় বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলীর পুত্র। ড. জাহিদের মানাদিরা আলী তালুকদার।


অ্যাডভোকেট রহমত আলী
মরহুম অ্যাডভোকেট রহমত আলী

ঢাকার সেন্ট্রাল রোডে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ড. জাহিদ হাসান তাপস ১৯৭০ সালের ২২ মে । অ্যাডভোকেট রহমত আলী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একদিন শিশুপুত্র তাপসকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু তাপসকে আদর করে কোলে নিয়ে বলেছিলেন, একদিন অনেক বড় হবে তোমারএই ছেলে । ওর জন্যআমার অফুরন্ত আশীর্বাদ রইলো। তিনি বলেন, 'সন্তানের সাফল্যের কাছে পিতার হেরে যাওয়ার চেয়ে গর্বের আর কী আছে?' জাহিদ হাসান তাপস ১৯৮৬ সালে ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে তাপস চারটি শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে চার শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গণিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও বেশিদিন ক্লাস করেননি।কারণ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের হাতছানি দিয়েছিল ওই সময়ে। মাত্র চার দিন ক্লাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বছরই স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান স্বপ্ন বাস্তবায়নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে।অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন পদার্থ বিজ্ঞানে।আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কারণে সুযোগ হয় নোবেল বিজয়ী তত্ত্বীয়পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন ভাইন ভার্গের কাছে শিক্ষা গ্রহণের।এরপর মাস্টার্সও পিএইচডি করতে চলে যান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। মূলত তখন থেকেই পদার্থ বিজ্ঞানের জগতে তার নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আর ওই সময় থেকেই তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কাজ করেন অসংখ্য খ্যাতিমানও নোবেল জয়ী পদার্থ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে। এরই মধ্যে বিশেষ আমন্ত্রণে অতিথি হয়ে লেকচার দিতে যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে।তার লেকচার শুনে মুগ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ উপস্থিত সব দর্শক। সেদিনই প্রস্তাব আসে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের।আর তিনি ওই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেন। যোগ দেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে।পিএইচডি শেষ করে ২০১২ সালে আইনস্টাইন, নিলস বোর, ওপেন হাইমারের বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। ইউনিভার্সিটিঅব ক্যালিফোর্নিয়াতেও কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। তার অধীনে ২০ জন শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।


১৯৯৮সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত একশটি দেশে প্রায় আড়াইশত আন্তর্জাতিক সেমিনারে লেকচার দেন তিনি।সুইডেন, ফ্রান্স, ভারত, ইতালি, জাপান, চীন, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক নানা সেমিনারে নিয়মিত লেকচার দিচ্ছেন তিনি।বিশ্বখ্যাত ল্যাবরেটরি সার্ন (সিইআরএন), লরেন্সবার্কলে, ব্রোকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবে কাজ করার সুযোগও হয়েছে ড. জাহিদ হাসান তাপসের। সৌদি আরবের কিংআবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার সম্পৃক্তা রয়েছে। এছাড়াও

বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি জানান, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলেছেন, যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয়না, তারা হয় বাংলা জানেন না, নয়তো বিজ্ঞান বোঝেন না।ছোটবেলায় কোনো এক ক্লাসে শিক্ষকের কাছে জাহিদ হাসান তাপস সত্যেন্দ্রনাথ বসুর এই উক্তিটি শুনে আস্বস্ত করে লালন করেন।বিজ্ঞানের প্রতি ক্রমশই দুর্বল হতে থাকেন।বিজ্ঞান নিয়ে খেলা করতে শুরু করেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই।মাত্র ১৬বছর বয়সে ১৯৮৬সালে জাহিদ হাসান তাপস লিখেফেলেন 'এসো ধূমকেতুর রাজ্যে' শিরোনামে বিজ্ঞানের একটি বই।সেসময় বইটি ব্যাপক সাড়া পড়ে।বইটি পড়ে বাংলা ভাষার বিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ আবদুল্লাহ্ আল-মুতী শরফুদ্দীন ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। আশীর্বাদ করেছিলেন 'তুমি অনেক বড় হবে।' ড. জাহিদ হাসান তাপস জানান, জাতি হিসেবে আমি সবাইকে চিন্তা করতে বলি।এই জাতির অনেক সম্ভাবনা আছে।তরুণদের সঠিকপরিচর্যা, প্রশিক্ষণ ও সুবিধা দিলে একজন নয়, এরকম হাজার হাজার বিজ্ঞানীর জন্ম হবে।২০১২সালে আলোর মৌলিক একক (ফোটন) বিশুদ্ধ কোয়ান্টাম অবস্থার পরিমাপের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য ফ্রান্সের সার্জ হারোশএবংযুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ওয়াইন ল্যান্ডকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।সেই বিবেচনায় ড. জাহিদ হাসান তাপসের অবদানকে তুলনা করলে এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেনা বিশ্ব মিডিয়াগুলো।


বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্য তিনি তার মা নাদিরা আলী তালুকদারের কাছে চিরঋণী বলেও জানান। তিনি বলেন, আমার মা সব সময় আমাকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতেন। বিভিন্ন বই কিনে পড়ার জন্য টাকা দিতেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে ড. জাহিদ হাসান তাপস প্রথম। দ্বিতীয় হলেন, অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয়। আর একমাত্র বোন অধ্যাপিকা রোমানা আলী তুসী। শিক্ষক ক্লাসে অঙ্ক শেখাতেন এক নিয়মে। শিক্ষকের শেখানো সেই এক নিয়মের অঙ্ক করে তৃপ্তি পেতেন না শিশু জাহিদ হাসান তাপস। নিজেই আবিষ্কার করতেন অঙ্কের নতুন নতুন নিয়ম। একই অঙ্ক তিন/চার নিয়মে করে পরদিন ক্লাসে দেখাতেন। শিশু তাপসের এমন প্রতিভা দেখে শিক্ষকরা শুধু অবাকই হতেন না, তার কাছ থেকে অঙ্কের নতুন নিয়ম বের করার কৌশলও জেনে নিতেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সেই জাহিদ হাসান ভাইল ফার্মিয়ন অস্তিত্ব আবিষ্কার করে পুরো বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। বিশ্বের প্রায় সব দেশের গণমাধ্যমেই তার আবিষ্কার নিয়ে বইছে আলোচনার ঝড়। ড. জাহিদ হাসান তাপসের মা নাদিরা আলী তালুকদার জানান, 'আমার বড় ছেলে জাহিদ ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিল। সে যখন স্কুলে পড়াশোনা করত তখন শিক্ষক ক্লাসে অঙ্ক শেখাতেন এক নিয়মে। শিক্ষকের শেখানো সেই এক নিয়মের অঙ্ক করে তৃপ্তি পেত না শিশু জাহিদ। নিজেই আবিষ্কার করত অঙ্কের নতুন নতুন নিয়ম। একই অঙ্ক তিন/চার নিয়মে করে পরদিন ক্লাসে দেখাত। শিশু তাপসের এমন প্রতিভা দেখে শিক্ষকরা শুধু অবাকই হতেন না, তার কাছ থেকে অঙ্কের নতুন নিয়ম বের করার কৌশলও জেনে নিতেন। শিক্ষকরা তখনই বলেছিলেন, বিস্ময়কর এই বালক একদিন বিশ্ব জয় করবেন। শিক্ষকদের কথাই সত্য হলো।

বিজ্ঞানী ড. জাহিদের পরিবার
বিজ্ঞানী ড. জাহিদের পরিবার

জাহিদের স্ত্রী সারাহ একজন সমান উজ্জ্বল এমআইটি-শিক্ষিত প্রকৌশলী, যিনি মাইক্রোসফটেরজন্য কাজ করেন। তাদের দুটি আদরের সন্তান রয়েছে: আরিক ইব্রাহিমহাসান (১৩) এবং সারিনা মরিয়ম হাসান (১১)।


সাম্প্রতিক সাফল্যঃ

ইরানের মোস্তফা (সা.) পুরস্কারঃ মহানবী মোস্তফা (সা.) নামে ২০১৫ সাল থেকে ঘোষিত এ পুরস্কারকে বলা হয় মুসলিম বিশ্বের নোবেল। ২১ এ অক্টোবর বৃহস্পতিবার তেহরানের ওয়াহদাত হলে অনুষ্ঠিত ২০২১ মুস্তফা পুরস্কারঅনুষ্ঠানে, পাঁচজন মুসলিম বিজ্ঞানীকে মুস্তফা পুরস্কারের ৪র্থ সংস্করণেরবিজয়ী হিসেবে ভূষিত করা হয়।জাহিদ হাসান প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একজন বাংলাদেশী অধ্যাপক যিনি "ওয়েল ফার্মিয়ন সেমিমেটালস" এর জন্য মুস্তাফা পুরস্কার জিতেছেন।হাসান তার গ্রহণযোগ্যতা বক্তৃতায় বলেন, “এই অর্জন আমার ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের গবেষণার ফলাফল।

 

শব্দঃ ৯৯২

তথ্য ও ছবি সংগ্রহঃ নেট।

বাংলাদেশ প্রতিদিন। লিঙ্কঃ https://www.bd-ratidin.com/various/2015/08/08/98610

 

Comments


bottom of page