top of page

গোবিন্দচন্দ্র দাস

Updated: Oct 10, 2022

তিনি একজন স্বভাব কবি । নরনারীর ইন্দ্রিজ প্রেম তাঁর কাব্যের মূল বিষয় হলেও স্বদেশপ্রেম, পল্লী প্রকৃতি ও মানবজীবনের গাথা তাঁর কাব্যে বর্ণিত হয়েছে।
 
গোবিন্দচন্দ্র দাস
গোবিন্দচন্দ্র দাস

১৬ জানুয়ারী ১৮৫৫ ( ৪ মাঘ ১২৬১) কবি গোবিন্দচন্দ্র দাস জন্মগ্রহন করেন । তিনি জন্মের কয়েক বছর আগেই মহাজনের ঋণের বোঝা টানতে না পেরে বাড়ী ঘর সবকিছু হারিয়ে পিতামহ ভোলানাথ দাস মহেশ্বরদী ত্যাগ করে সপরিবারে বসতি স্থাপন করেন অরন্য সংকুল ধিরাশ্রম গ্রামে। আর কবির জন্মের কয়েকবছর পরেই ১৮৬০ এ তার পিতা রামনাথ দাস এবং ১৮৬১ তে মাতা আনন্দময়ী দেবী মারা যান। এতে তৎকালীন ভাওয়াল রাজা কালী নারায়ণ রায় দয়াপরবশ হয়ে মাসিক ৪ তাকা বৃত্তি ও ১ একর জমি পত্তনি দেন। নিঃসন্তান জেঠার গরুর রাখালের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি । রানী সত্যভামা ১৮৬৬ তে তাঁকে ছাত্র বৃত্তি সহ মাইনর স্কুলে ভর্তি করে দেন, কিন্তু কবি বেশিদুর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। পরবর্তিতে ১৮৭৭ এ ভাওয়াল রাজ কুমার রাজেন্দ্র নারায়নের ব্যক্তিগত সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। তিনি রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক কবিদের মধ্যে একজন ।


গোবিন্দচন্দ্র দাস
বর্তমানে গোবিন্দচন্দ্র দাসের বাড়ি

সুসাহিত্যিক পন্ডিত কালীপ্রসন্ন ঘোষ ছিলেন তখন ভাওয়াল এস্টেটের দেওয়ান। গোবিন্দ চন্দ্র দাসের সাথে বিরোধ বাধে দেওয়ান কালীপ্রসন্ন ঘোষের। কবির অপরাধ তিনি দেওয়ানের দুর্নীতি, অন্যায় এবং রাজার অত্যাচারের প্রতিবাদ করতেন। এই প্রতিবাদই তার দুর্ভোগ ডেকে আনে। দেওয়ানের কুনজরে পড়েন। চাকরি হারান। তাকে উচ্ছেদ করা হয় পৈতৃক ভিটা থেকে। হাতী দিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেয় দেওয়ানের লোকেরা। দেওয়ান কালীপ্রসন্ন ঘোষের অত্যাচারে কবি গোবিন্দ্র চন্দ্র দাস এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন, শেষাবধি। এ চক্রান্তের ফলে গোবিন্দ চন্দ্র দাসকে মাতৃভূমি ভাওয়াল ত্যাগ করে কখনো মুক্তাগাছা, আবার কখনো মুন্সীগঞ্জ চলে যেতে হয়েছে।

কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা ‘নবযুগ’-এ ভাওয়াল রাজাদের দুঃশাসনকে উপজীব্য করে সাহিত্য প্রকাশ করেন এবং বাংলা ১২৮৪ সালে ভাওয়াল রাজাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রজাদের পক্ষাবলম্বন করেন। ফলে তিনি ভাওয়াল রাজার বিরাগভাজন হন এবং একটি নারীঘটিত মিথ্যাচার করা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।

গোবিন্দচন্দ্র দাস
গোবিন্দচন্দ্র দাসের নিজ হাতে লিখা

এ তিনটি বিষয়কে পুঁজি করে বাংলা ১২৯৮ সালের ফাল্গুন মাসে ভাওয়াল রাজ রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় কবিকে নির্বাসনদণ্ড প্রদান করেন। রাজ দণ্ডাদেশ ছিল এ রকম—তিনি (গোবিন্দ চন্দ্র দাস) যেন এ মুহূর্তেই চিরদিনের জন্য জয়দেবপুর পরিত্যাগ করেন। কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস মনোকষ্টে মাতৃভূমি জয়দেবপুর ত্যাগ করে ১৮৮০ সালে মুক্তাগাছায় চলে যান এবং ১৮৮৩ সালে শেরপুরের জমিদার হরচন্দ্র চৌধুরীর পত্রিকা চারুবার্তায় যোগ দেন। এখানে তিনি ১৮৯২ সালের প্রথম পর্যায় পর্যন্ত অবস্থান করেন।

এরপর কবি ১৮৯২ সালে মুন্সীগঞ্জে চলে আসেন জীবিকার সন্ধানে। এখানকার বিখ্যাত সাহিত্যানুরাগী দেবী প্রসন্ন রায় চৌধুরীর পরামর্শে ‘প্রকৃতি’ নামক একটি সাপ্তাহিকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে থাকেন ‘মগের মুল্লুক’ কবিতাটি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ১৮৯৩ সালে ‘প্রকৃতি’র সম্পাদক অনুকূল চন্দ্র মুখার্জির বিরুদ্ধে ঢাকা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি মানহানির অভিযোগ করেন। এ মামলার ফলে মগের_মুল্লুক কবিতাটি এ দেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ‘মগের মুল্লুক’ বই আকারে প্রকাশিত হয় এবং বিপুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। পরে অবশ্য বঙ্কিম চন্দ্রের অনুরোধে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

গোবিন্দচন্দ্র দাস
গোবিন্দচন্দ্র দাস

কবির যখন খুব দুর্দিন তখন তাঁর প্রথম স্ত্রী মারা যান। পরে বিয়ে করেন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের প্রমাদা সুন্দরীকে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রমাদার পিতৃ সম্পত্তির মালিক হন কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস। মগের মুল্লুক রচনাকালে একবার মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের লতব্দি গ্রামের কবিকে হত্যা করার দায়ে তাঁকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এটিও ছিল ভাওয়াল রাজবাড়ির ম্যানেজার কালী প্রসন্ন ঘোষের ষড়যন্ত্র।

গোবিন্দচন্দ্র দাস
গোবিন্দচন্দ্র দাসের মেয়ে

কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস ১৯১৩ সালে বিষফোঁড়ায় আক্রান্ত হন। তখন কবিকে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাসকে আর্থিক সহায়তা করেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। সারা জীবনই কবিকে অর্থকষ্টে কাটাতে হয়েছে। সারা জীবনের অভুক্ত এ দেশপ্রেমিক কবিকে নিয়ে খুব একটা লেখা হয়নি। কবির তেমন গ্রন্থও সংগ্রহ করা হয়নি। ইদানীং পাওয়া যাচ্ছে না গোবিন্দ চন্দ্র দাসের কোনো কাব্যগ্রন্থ। আমাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে স্বভাবকবি গোবিন্দ দাস। শত কষ্ট বেদনা ও অসুস্থতার মধ্যেও কবি লিখে গেছেন অবিরত।

"দিন ফুরায়ে যায়রে আমার, দিন ফুরায়ে যায়

মাঝের রবি ডুবছে সাঁঝে দিনটা গেল বৃথা কাজে

এক পা কেবল পাড়ে আছে, এক পা দিচ্ছি নায়"

এ রকমই মর্মস্পর্শী কবিতা লিখতেন শেষ বয়সে। রোগ, শোক, ক্ষুধায় কাতর কবি বাংলা ১৩২৫ সালের ১৩ আশ্বিন, ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার নারিন্দার বিক্রমপুর জমিদার চন্দ্র কান্ত ঘোষের বাড়িতে মারা যান।


তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে ছিল। ছোট মেয়ের নাম ভক্তিময়ই যিনি পরে হরিপদ ভৌমিকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তিন সন্তানের জননী ছিলেন, নাতির নাম দিলীপ ভৌমিক (১৯৪৮-১৯৯৮)।

 

শব্দঃ ৬৪৭

ছবি ও লেখাঃ সংগৃহীত।

তথ্যঃ উইকিপিডিয়া,নেট

গ্রন্থঃ গাজীপুরের ইতিহাস

 



Comments


bottom of page