ভাষা শহীদ আবুল বরকত
- এডিট ডেস্ক
- Feb 1, 2020
- 3 min read
Updated: Jun 4, 2023
আবুল বরকত ও তাঁর মা, বাবা এবং ভাইয়ের মৃত্যু যেন একই সূত্রে গাঁথা। এদের সবাই মারা গেছেন বিভিন্ন বছরের বিভিন্ন মাসের একই তারিখ একুশে’তে।

নাম:আবুল বরকত জন্ম:১৬ জুন, ১৯২৭ জন্মস্থান:মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহাকুমার বাবলা গ্রামে পিতা:শামসুউদ্দিন
মা:হাসিনা বিবি শিক্ষাজীবন:রাষ্ট্রবিজ্ঞান (এম.এ শেষ বর্ষ),ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মৃত্যু:২১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল সমাধি স্থল: ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে ৷
আবুল বরকতের ডাক নাম ছিল আবাই। ১৯৪৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ১৯৪৮ সালে তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন। ঢাকার পুরানা পল্টনে বিষ্ণু প্রিয়া ভবনে মামা আব্দুল মালেক সাহেবের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ওই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে তিনি অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেনীতে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন এবং এম.এ. শেষ পর্বে ভর্তি হন।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা ছিল উত্তাল। ১৯৫২-র ২১শে_ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ গুলি চালালে হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন আবুল বরকত। তলপেটে গুলি লেগেছিল বরকতের। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়া হয়। বরকত বলেছিলেন খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি বাঁচবনা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে রাত আটটায় হাসপাতালে তিনি শাহাদত বরণ করেন। সেদিন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে আরো শহীদ হয়েছিলেন আবদুস সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর রহমান প্রমূখ কিন্তু মোট কতজন শহীদ হন তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। কারন অনেক শহীদের লাশ মর্গ হতে মিলিটারী ও পুলিশ গুম করে ফেলে।

পরের দিন তাদের জানাজা হবে ছাত্ররা মাইকে এই ঘোষনা দিলে পুলিশ সে রাতেই মর্গ থেকে লাশ সরিয়ে ফেলে। আবুল বরকতের মামা আব্দুল মালেক ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ্যাসিস্ট্যান্ট একাউন্টস অফিসার এবং তার এক আত্মীয় আবুল কাসেম এস.এম.জি. বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারী ছিলেন। তারা দুজনে তদবীর করে পুলিশের কাছ থেকে আবুল বরকতের লাশ উদ্ধার করেন। ২১ ফেব্রুয়ারী রাত ১০টার দিকে পুলিশের কড়া পাহাড়ায় আজিমপুর পুরাতন গোরস্থানে আবুল বরকতের লাশ দাফন করা হয়। পরের দিন সন্ধ্যায় বাবলায় খবর আসে। পিতা মাতা প্রচন্ডভাবে ভাঙ্গে পড়েন।

পরবর্তিতে তাঁর মা হাসিনা বেগম ১৯৬৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।
আদরের বড় ছেলে আবুল বরকত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মিছিলে শহীদ হওয়ার পর তার বাবা-মা ঢাকায় স্থায়িভাবে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন , যাতে অন্তত প্রতি বছর আজিমপুরের কবরস্থানে ঘুমিয়ে থাকা ছেলেকে একটু আদর করে আসতে পারেন। ১৯৬৩ সালের ২১ জুলাই বরকতের বাবা শামসুজ্জোহা ভুলু মিয়া ভারতে মারা যাওয়ার পরের বছর মা হাসিনা বানু ১৯৬৪ সালে ভারত থেকে এদেশে চলে আসেন। নিবাস গাড়েন গাজীপুর মহানগরের চান্দনা গ্রামের ‘বাবলা বিথী’তে। শহীদ বরকতের একমাত্র ভাই আবুল হাসনাত রোগাক্রান্ত হয়ে ১৯৬৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এখানেই মারা যান। তার ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে। বরকতের চার বোনই গতায়ু হয়েছেন ইতোমধ্যে। গাজীপুরের চান্দনা গ্রামে এখন বসবাস করছেন বরকতের তিন ভাতিজা এবং তাদের সন্তানরা। শহীদ বরকতের মা হাসিনা বানু ১৯৮২ সালের ২১ এপ্রিল এ বাড়িতেই মারা যান। বরকত ও তাঁর মা, বাবা এবং ভাইয়ের মৃত্যু যেন একই সূত্রে গাঁথা। এদের সবাই মারা গেছেন বিভিন্ন বছরের বিভিন্ন মাসের একই তারিখ একুশে’। গাজীপুরের জয়দেবপুর, পূবাইল ও কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বরকতের অন্যান্য আত্মীয় স্বজন।
বরকত ও তাঁর মা, বাবা এবং ভাইয়ের মৃত্যু যেন একই সূত্রে গাঁথা। এদের সবাই মারা গেছেন বিভিন্ন বছরের বিভিন্ন মাসের একই তারিখ একুশে’তে।
সম্মাননাঃ
২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার বরকতকে একুশে পদক প্রদান করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বরকত স্মৃতি জাদুঘর নামে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তাঁর জীবনী নিয়ে বায়ান্নর মিছিল নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামে প্রতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারী রাত্রে মশাল মিছিলের মাধ্যমে শুরু হয় বরকত মেলা।
১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হাসিনা বানুকে ৬৮ শতাংশ জমি দান করেন।
তাঁর স্মরনে গাজীপুর স্টেডিয়ামের নাম শহীদ বরকত স্টেডিয়াম।
তাঁর স্মরণে তিতুমির কলেজের অডিটোরিয়ামের নাম "শহীদ বরকত মিলনায়াতন"।
শব্দঃ ৪৩১
তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া , দৈনিকবার্তাঃ http://www.doinikbarta.com/2016/02/17/শহীদদের-পরিপূর্ণ-স্বীকৃ-2/
Commentaires